
আমি রাজনীতিকে যতদিন বুঝেছি, গত দুই দশক ধরে, সে অভিজ্ঞতা থেকে আমি প্রায়শই দেশ বদলে দিতে চাওয়া বন্ধু ও নবীন রাজনীতিকদের বলি বঙ্গবন্ধুর পর বাংলা আর এমন কোনো বন্ধু পায় নাই যিনি একটি জাতির জন্য যৌবনের ১২ বছর জেল খাটা দূরে থাক জীবনের ১২ মাসও জেলে থাকতে চান। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত, জীবনের সেরা সময়টুকুতে তিনি পরিবার, পরিজন থেকে দূরে দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর জেলের প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছে। এ ত্যাগ সীমাহীন। এবং তৎকালীন রাজনীতির মাঠের বহু নক্ষত্র যারা কেবল আপোষকামীতা, ভীরুতা, কাপুরুষতার জন্য পিছিয়ে পড়েছেন এক তরুণ, দুঃসাহসী, আপোষহীন রাজনীতিকের কাছে। যারা বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করেন ও করতে চান, তারা যেন ক্ষমতাকে নয়, বঙ্গবন্ধুর ত্যাগকে আঁকড়ে ধরেন, তাকে সঠিকভাবে পাঠ করেন।
একটা সময় বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ, শৌর্যবীর্যের গল্পগুলো রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করতো। দেশের মানুষের জন্য তাঁর সীমাহীন ভালোবাসা ও ত্যাগের গল্প শুনে শুনে একসময় মনে হতো রাজনীতিই করা উচিত, রাজনীতির মধ্য দিয়ে সমাজ-রাষ্ট্রের দেনা শোধ করা যায়। কিন্তু আজকে তাঁর দল, কন্যার ক্ষমতালোভী, মানুষের অধিকার হরণের রাজনীতি দেখে এ সাধ আর জাগে না। বাংলাদেশে বর্তমান আওয়ামী লীগের চরম অধঃপতন দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে যাচাই করা যাবে না কিংবা বঙ্গবন্ধুর নিয়তিও নির্ধারিত হবে না। বঙ্গবন্ধু অতিমানব নন, তিনি দোষ-ত্রুটি নিয়েই একজন মানুষ। তার গুণ ছিলো, দোষও ছিলো। কিন্তু আমাদের এই জনগোষ্ঠীর জন্য উনার যে আত্মত্যাগ সেটিকে এক পাল্লায় মাপলে, অন্য পাল্লায় উনার মানবীয় দোষগুলো অতি ক্ষুদ্র হয়ে যায়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের” রাজনীতি প্রাসঙ্গিক থাকুক কিংবা নাই থাকুক, বঙ্গবন্ধু তাঁর আপন মহিমায় আমাদের ইতিহাস উজ্জ্বল করে টিকে থাকবেন। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের কৃষক-প্রজা পার্টির অস্তিত্ব নেই, কিন্তু ফজলুল হককে বাংলার গণমানুষের রাজনীতির প্রথম উত্তম পুরুষ, প্রথম নক্ষত্র হিসেবে যেভাবে বাংলার মানুষ আজন্ম মনে রাখবে, তেমনি বঙ্গবন্ধুও একটি জাতির স্বাধিকার, নিজস্ব মানচিত্রের লড়াইয়ের নেতা হিসেবে স্বমহিমায় জ্বলজ্বল করবেন। আমি মনে করি ক্ষমতার অতীত ও বর্তমান থেকে যেদিন বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করা যাবে, সেদিন আমাদের তরুণদের মাঝে তিনি সাহস, আত্মত্যাগ, শৌর্যের রাজনীতির এক বড় উৎসাহ, প্রেরণার মূর্ত-প্রতীক হয়ে উঠবেন। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর প্রয়ান দিবসে তাঁর প্রতি প্রতি অকৃত্তিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।