বাংলাদেশের সম্ভবত সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে ম্যাডাম শেখ হাসিনা ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে যেয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা এস্টাবলিস্টমেন্টকে বাংলাদেশের রাজনীতি, প্রশাসনে, সমাজের সর্বস্তরে যে অবাদ বিচরণের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন সেটির বলি সম্ভবত তিনি নিজেই হবেন সর্বপ্রথমে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় হবে শেখ হাসিনাকে বলির পাঠা করে ভারতী গোয়েন্দা এস্টাবলিস্টমেন্টের এজেন্টরা এদেশের সর্বস্তরে ঝেঁকে বসলেও একসময় শেখ হাসিনা নিজেই টের পাবেন যে তিনি মসনদে আছেন কিন্তু ক্ষমতা আর তার হাতে নেই। এবং একটা পর্যায়ে তারা শেখ হাসিনাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে সরিয়ে দেওয়ায় উদ্যোগী হলেও তার আর কিছুই করার থাকবে না। উনাকে সামনে রেখে দালালরা এদেশকে কব্জায় নিতে যা করার তা ইতোমধ্যে করে নিবে।
বিষয়টা অনেকটা মীর জাফর আলী খান ও ব্রিটিশদের স্বার্থান্বেষী লড়াইয়ের মতো একটি ব্যাপার। মীর জাফর আলী খানের নিকট মসনদ ছিলো চূড়ান্ত লক্ষ্য আর ব্রিটিশদের লক্ষ্য ছিলো মীর জাফর আলী খানকে সামনে রেখে বাংলার রাজনীতি ও ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ করে নেওয়া। মীর জাফর আলী খান ভেবেছিলেন তিনি নিজের ক্ষমতা অর্জনে ও রক্ষায় ব্রিটিশদের “ব্যবহার” করছেন, আর ব্রিটিশরা ভেবেছে অন্য। তারা বাংলাকে কব্জায় নিতে মীর জাফর আলী খানকে সাময়িক “ব্যবহার” করছিলো মাত্র। চূড়ান্ত বিচারে ব্রিটিশরা ছিলো মীর জাফর আলী খানের চিন্তার চেয়ে বড়, যার ফলে মীর জাফর আলী খান যখন বুঝতে পারলেন যে তিনি ফাঁদে পড়েছেন, তখন তিনি নিজের ভুল সংশোধনের জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা করলেও ততক্ষণে তিনি পরাজিত সৈনিক।
আমার বড় ভয় ক্ষমতার দরকষাকষি করতে গিয়ে শেখ হাসিনা একইভাবে না ভারতীয় এস্টাবলিস্টমেন্টের ফাঁদে পড়েন এবং পরাজিত ও রিক্ত সৈনিক হয়ে পড়েন! তাতে বাংলার কেউ কেউ ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে গালি দিয়ে সন্তুষ্টি অর্জন করবেন, শেখ হাসিনাও বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে রিক্ত, কপর্দকশূন্য হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু বাংলার উপর আঞ্চলিক সাম্রাজ্যবাদী শকুন যেভাবে ঝেঁকে বসতে পারে তাতে ব্যক্তি শেখ হাসিনা বা তার পরিণতির বিষয়টি তুচ্ছ হয়ে যেতে পারে। আমি জানি না পরিস্থিতি কত নাজুক। দেশে এখন ভারত সরকারের পদক্ষেপের পক্ষে মানববন্ধন হয় (এটা কয়েক বছর আগে কল্পনাও করা যেতো না), ভারতের সমালোচনা করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি নূরদের নিজ ক্যাম্পাসে মারধর করা হয়, বুয়েট ছাত্র আবরারদের এমনকি খুনও করে ফেলা হয়! প্রথাগত গণমাধ্যমে ভারত-বিরোধী বিষয়বস্তু সেন্সর করা হয়। এক অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল সোহরাওয়ার্দী যেভাবে বলে ফেলেছেন যে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা নীতি কি হবে তার খসড়া দলিল ভারতীয়রা তার কাছে চেয়েছে পূর্বানুমতির জন্য কিংবা ভারতীয়রা দেশের বিভিন্ন সংবেদনশীল নিয়োগ “অনুমোদন” করে, সেটি অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকতে পারে, কিন্তু আমরা এগুলো গত এক দশক ধরে বলে আসছি।
আশু করণীয় কী?
ম্যাডাম শেখ হাসিনা যদি এই মহা-বিপদটি অনুধাবন করার চেষ্টা করেন এবং সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হন ও দেশের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থরক্ষায় উদ্বিগ্ন হন, তাহলে তিনি ন্যূনপক্ষে তিনটি কাজ করবেন:
১। রাজনৈতিক সমঝোতার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। কেবল চীন-ভারত খেলে তিনি এ বিপদ থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারবেন না, বরং পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করবেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে নিয়ে এই বিপদ মোকাবেলার যাবতীয় উদ্যোগ নিতে হবে। তবে এটি করার জন্য তার ক্ষমতার মোহ পরিত্যাগ করতে হবে। বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষগুলোকেও বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ-পরায়ন প্রবৃত্তি পরিত্যাগ এবং রিকনসিলিয়েশনের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে হবে।
২। তিনি রাজনৈতিক নিপীড়ন বন্ধ করবেন এবং বিরোধী রক্ষণশীলদের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ দিবেন কারণ এই আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রক্ষণশীলরা ঐতিহাসিকভাবে স্বাভাবিক হেজ হিসেবে কাজ করেছে।
৩। বাংলাদেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তিনি শক্ত হাতে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন দিবেন এবং ফলাফল মেনে নিবেন। শক্ত হাতে বললাম এজন্য যে আমি নিশ্চিত নই দেশের প্রশাসন যন্ত্রের উপর তার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি রয়েছে কিনা কিংবা ভারতীয় গোয়েন্দারা নির্বাচন ম্যানিপুলেট করলে তিনি তা রুখতে পারবেন কিনা।