আপনি বনাম শেখ হাসিনার স্বৈরতন্ত্র: লড়াই বেছে নিন

আপনি বাম, ডান, মধ্য – যে পন্থীই হোন-না-কেন, আপনি সেক্যুলার বা ধর্মীয় রাজনীতি যে মতবাদেই বিশ্বাসী হোন, কিংবা আপনি বাঙালি জাতীয়তাবাদ বা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ যেটিরই সমর্থক হোন, আপনি যদি এই মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচারী একনায়ক না বলেন, শেখ হাসিনা জনগণের ম্যান্ডেট চুরি করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে এটি বলার সাহস না দেখান, শেখ হাসিনা গুম, খুন‍-কে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে জারি করেছেন এ কথা বলতে না পারেন, তাহলে বাংলাদেশের আজ ও আগামী দিনের রাজনীতিতে আপনি গণতন্ত্র, মানবাধিকার এসব নিয়ে কথা বলার কোন বৈধতা আপনার নেই, থাকবে না।

আগামীর বাংলাদেশে আপনার কথা বলার লেজিটিমেসি নির্ধারণ হবে আপনি শেখ হাসিনার ২০১৪-পরবর্তী শাসনকে কী হিসেবে দেখেছেন, তার নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে সাহস করে সত্য কথা বলতে পেরেছেন কিনা, কিংবা মানুষের অধিকারের পক্ষে নিঃসঙ্কোচে দাড়িয়েছেন কিনা এসব দিয়ে।

আপনি যদি অজুহাত দেন যে আপনি ভয় পেয়ে চুপসে আছেন বা ছিলেন, তাহলে আপনি যতদিন বেঁচে থাকবেন এই কাপুরুষতা নিয়েই দয়া করে বেঁচে থাকবেন। মুক্ত বাংলাদেশে আপনার কথা আমাদের বিস্বাদ লাগবে, অপাঙতেয় ও অপ্রয়োজনীয় মনে হবে। আপনি ব্যক্তি হিসেবে অবশ্যই আপনার মানবিক মর্যাদা নিয়ে টিকে থাকবেন, কিন্তু আজকের চুপষে থাকা কাপুরুষ মানুষটি দয়া করে আগামীর মুক্ত বাংলাদেশে মানুষকে গণতন্ত্র, বাক-স্বাধীনতা, অধিকারের সবক দিবেন না।

আপনি জ্ঞানী, বুদ্ধিজীবি, মানবাধিকার কর্মী কিনা সেটি আপনার প্রোফাইলের পরিচয়, আপনার শিক্ষা সনদ বা পেশাগত অবস্থান, কিংবা আপনার চিন্তার উচ্চতা দিয়ে নির্ধারিত হবে না, বরং মানুষের অধিকারহীনতার কালে আপনি কতটা বুক চিতিয়ে নিজ-নিজ অবস্থান থেকে লড়তে পেরেছেন কিংবা অবৈধ শাসকের চোখ রাঙানিকে ভয় না পেয়ে কতটা তাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলেছেন সেটি দিয়ে।

একটা দেশে একদল দস্যু জোর করে আপনাকে-আমাকে ভয় দেখিয়ে ”শাসন” করছে আর আপনি মানুষের অধিকারের পক্ষে না দাঁড়ালে আপনার জ্ঞান, বুদ্ধি, শিক্ষা তা দিয়ে আপনি আপনার ব্যক্তিগত শৌর্যবীর্য বৃদ্ধি করতে থাকুন, ব্যক্তিগত জীবন-যাপন করুন। এতে লজ্জা নেই। কিন্তু রাষ্ট্রের সংকটে, মানুষের অধিকারহীনতার সময়ে কথা না বলা আপনি দেশের মুক্ত কোনো সময়ে টেলিভিশনের টকশো গরম করলে তা জনগণের কাছে অশ্লীল শোনাবে। ১৯৭১ সালের ভূমিকা দিয়ে যেভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনগণের চেতনার মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়, ২০১৪-পরবর্তী সময়ে আপনার-আমার ভূমিকা দিয়ে জনগণের পক্ষ-বিপক্ষের শক্তি সনাক্ত করা হবে। সুতরাং সাধু সাবধান!

**পুনশ্চ: আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মানুষ নির্বিবাদী, নিজের মতো করে নির্ঝঞ্জাটে বেঁচে থাকতে চায়। ব্যক্তিগত জীবন-যাপন করতে চায়। পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই তাই। এটিতে কোনো সংকোচ নেই। এটি কোনো অপরাধও নয় – বরং এটি মানুষের সচেতন সিদ্ধান্ত। তাঁদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাই থাকবে। এই লেখাটি তাঁদের উদ্দেশ্যেও নয়। মানুষের ব্যক্তি জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা কিংবা কালেক্টিভ স্পেস থেকে দূরে থাকার বাসনাকে আমাদের সচেতন সিদ্ধান্ত হিসেবে শ্রদ্ধা করতে হবে। তাঁদের মধ্যে ভণ্ডামির পরিমাণও কম। এ লেখাটি বরং তাদের উদ্দেশ্যে যারা রাজনীতি, সমাজের কালেক্টিভ স্পেসে সক্রিয় থাকতে চায় কিংবা সেটিকে তাদের ধর্তব্য, কর্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছে। তাদের প্রকৃত পরিচয় নির্ণীত হবে মানুষের অধিকারহীন সময়ে তাদের অবস্থান দিয়ে।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান