জয়দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই জন রাজনীতিকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় সাম্প্রতিক রাজনীতির ভয়ংকর এক দিক উন্মোচিত হয়েছে যাতে যারপরণাই আশংকিত হয়ে পড়েছি।
ঘটনা-১:
জয়দেশের রাজনীতির একেবারে শীর্ষস্থানীয় এক জনপ্রিয় রাজনীতিক মন্ত্রী হওয়ার ইদুর দৌড়ে ছিলেন। ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় তিনি জানান তাঁকে একটি মাধ্যমে প্রস্তাব দেওয়া হয় প্রতিবেশি ভরতরাজ্যের ‘দানব বাবু‘র সাথে সাক্ষাত করলে মন্ত্রীত্বের নিশ্চয়তা শতভাগ। বেচারা নিজেকে বেচতে রাজী হননি এবং ‘দানব বাবু‘-কে দেখা দেননি, যার ফলেই সম্ভবত জয়দেশের মন্ত্রীত্বও অবশেষে পাননি।
ঘটনা-২:
জয়দেশের ‘সং সদ‘ নির্বাচনে জয়দেশের রাণীর দলের এক প্রার্থীর সাথে এক ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় সংশ্লিষ্ট রাজনীতিক এক প্রকার গর্বভরে স্বগোক্তি করেন যে তাঁর মনোনয়ন নিয়ে এক প্রকার দ্বিধাদ্বন্ধ ও দোলাচল ছিলো (স্থানীয়ভাবে তার শক্ত প্রতিদ্বন্ধী ছিলো) এবং তাকেও একইভাবে ‘একটি মাধ্যমে‘ বলা হয় যে ভরতরাজ্যে ধর্না দিলে তিনি মনোনয়ন পাবেন। তিনি নিজেকে বেচে দিয়েছেন, মনোনয়নও পেয়েছেন।
দুটো ঘটনা – একটা খেদোক্তি আরেকটি স্বগোক্তি। কিন্তু ভয়ংকর সংকেত! শোনা যায় জয়দেশের ‘সং সদে‘ নাকি এখন কয়েক ডজন প্রতিনিধি ভরতরাজ্যে হয় ‘দানব বাবু‘ না হয় ‘অমৃত বাবু‘-দের আশীর্বাদ নিয়ে ‘সং‘ হয়েছেন। এছাড়া জয়দেশের প্রশাসন, পুলিশ প্রভৃতি স্থানেও না-কি কয়েক ডজন কর্মকর্তা সরাসরি ভরতরাজ্যের আশীর্বাদে পদাভিষিক্ত হয়েছেন।
এসব ঘটনা কী জয়দেশের রাণী মহোদয় জানেন? হয়তো জানেন, হয়তো না। কিন্তু ইঙ্গিত পরিষ্কার। জয়দেশে ‘সং সদ‘ হতে কিংবা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি হতে সীমান্তের ওপারের আশীর্বাদ কাজ করছে, আনুগত্যের কেন্দ্রস্থল পরিবর্তিত হচ্ছে। জয়দেশের বহু দালাল এখন জয়দেশের নেতৃত্ব, রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন না করেও ক্ষমতার চূড়ায় উঠতে পারে। এ এক ভয়ংকর অশনিসংকেত।
সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের সুযোগ কম। তবে এক দশক আগে ভরতরাজ্যের এক গোয়েন্দা কর্তাব্যক্তির দম্ভোক্তি যে জয়দেশকে আর ‘রাডারের বাইরে যেতে দেওয়া হবে না‘ এবং ব্যক্তিগত উপরে উল্লিখিত দুটো অভিজ্ঞতা মিলে এই আশংকা আর উড়িয়ে দেওয়ার জায়গায় নেই। ব্রাজিলিয়ান শিক্ষাবিদ, দার্শনিক পাওলো ফ্রেইরি পেডাগজি অব দ্যা অপ্রেস্ড বইয়ে একদা লিখেছেন কিভাবে অত্যাচারিত নিজেই অত্যাচারি দানব হয়ে উঠতে পারে। জয়দেশের বর্তমান রাণীর দল জয়দেশে স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিয়েছে, কিন্তু দলটি জয়দেশের পরাধীনতায়ও যেভাবে সমানতালে নেতৃত্ব দিচ্ছে তা পাওলো ফ্রেইরি উল্লিখিত দ্বিচারিতার সমার্থক — স্বাধীনতাকামী একটি দল ক্ষমতার লোভে পড়ে জাতিকে কি সত্যিকার অর্থেই পরাধীনতার শেকলে বেঁধে ফেলছে?