বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান দুই দলের রাজনীতি যে সম্পূর্ণ গণবিচ্ছিন্ন তার প্রমাণ দুটি দলকে যেন নিয়মিত করেই যেতে হবে। আওয়ামী লীগ ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখের জাতীয় নির্বাচনে প্রমাণ করেছে সরকারে যাওয়া বা থাকার জন্য জনগণের বা জনসমর্থনের কোনো প্রয়োজন নেই, পুলিশ বাহিনী ও সরকারের প্রশাসনই যথেষ্ট – তারা কেবল বিরোধী দলকে মারতে ও জেলে ভরতেই পটু নয়, তারা ব্যালট বাক্সও ভরে দিতে পারে। তাদের দলের নেতাকর্মীদের মাঝেও এই উপলব্ধি নতুন যে দলকে সরকারে নিতে তাদের কোনো ভূমিকা না রাখলেও চলবে। জনগণের সাথে আওয়ামী লীগের এই বিচ্ছেদ ঐতিহাসিক। বহুবছর ধরে মানুষের সাথে একটি প্রাচীন রাজনৈতিক দলের বিচ্ছেদের উদাহরণ তুলে ধরতে ক্লাসরুমে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখটি পড়ানো হবে।
বিএনপি দলটিও অতীতে সরকারে থাকা অবস্থায় তাদের গণবিরোধী রাজনীতির কারণে জনগণের সাথে সম্পর্কহীন হয়ে পড়েছিলো। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সরকার-বিরোধী মনোভাবকে পুঁজি করে এবং যথাযথ বিকল্পের অভাবে বিএনপিকে মানুষ ভোট দিয়ে দিতো। কিন্তু তাতে দলটির সাথে জনগণের সম্পর্কের কতটুকু উন্নতি হতো বলা মুশকিল। তারা হয়তো আরেক মেয়াদে ‘শাসনের‘-ই কেবল সুযোগ পেতো। তাদের এই দীর্ঘ জনবিচ্ছিন্নতার মধ্যে আওয়ামী লীগ মৃতপ্রায় বিএনপির হাতে একটি দুরন্ত ট্রাম্প কার্ড তুলে দিয়েছিলো। প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া, মৃতপ্রায় দলটি বেঁচে ওঠার সম্ভাবনা জাগিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ গণবিরোধী হয়ে উঠা, জনগণের মুখোমুখি দাড়ানোর ফলে জনগণের সঙ্গে তাদের সংঘাত অনিবার্য। যার দুয়েকটা নমুনা দেখা গিয়েছে। এই অনিবার্য সংঘাতের সন্ধিক্ষণে বিএনপির পুনরায় জনসম্পৃক্ততার একটি বড় সুযোগ তৈরি হয়েছিলো। কারণ ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যরাতের পুলিশী নির্বাচন জনগণের মধ্যে সরকার বিরোধীতার যে ঢেউ, সরকারের বৈধতার প্রশ্নে জনগণের মধ্যে যে দ্বিধাহীন অবস্থান তৈরি করেছে তার ছিটেফোটা ধারণ করেও বিএনপি রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারতো – যদি তারা জনগণের পালস ধরতে পারতো। জনগণের ক্ষমতাহীনতার সঙ্গে কাকতালীয়ভাবে হলেও বিএনপির ‘ক্ষমতাহীনতার‘ একটি দুর্বল যোগসূত্র তৈরির সুযোগ বিএনপির সামনে উপস্থিত হয়েছিলো। কিন্তু বিএনপি প্রমাণ করে দিয়েছে আওয়ামীলীগের মতো তারাও জনআকাঙ্খা, জনগণের রাজনীতি থেকে সত্যি-সত্যিই বহুদূরে চলে গিয়েছে।
এখন বাংলাদেশের জনগণের সামনে পথ পরিষ্কার। জনগণের সাথে সম্পর্কহীন, গণশত্রু দুটি দুর্বৃত্ত দলের হাত থেকে মুক্তির লড়াইয়ে নতুন শক্তির নেতৃত্ব দিতে হবে। সেটি ডান-বাম যেকোনো দিক থেকে আসতে পারে। এই অবৈধভাবে নির্বাচিতদের ক্লাবে যোগ দিয়ে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক বিএনপি গণবিরোধী আওয়ামী লীগের সহযোগী শক্তি হিসেবে আভির্ভুত হয়েছে অথবা জনগণের ক্ষমতায়নের লড়াইয়ে নিজেদের অপাঙতেয় শক্তি হিসেবে প্রমাণ করেছে। এ শূন্য স্থান শীঘ্রই পূরণ হবে। তবে রাজনৈতিক পন্থায় এ শূন্যস্থান পূরণ হলে গণবিরোধী দলগুলোর নেতারা বিচারের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পাবেন। আর দু:খজনকভাবে ভিন্ন কিছু হলে তারা পলায়নের হেলিকপ্টারও মিস করতে পারেন – যেটি আমরা চাই-বা-না-চাই অনাকাঙ্ক্ষিত, দু:খজনক বাস্তবতা তৈরি করবে। বাংলাদেশ ভালো থাকুক।