বাংলাদেশের বেশিরভাগ তথাকথিত পত্র-পত্রিকা বিশেষ প্রতিবেদনের নামে গালগল্প লিখে থাকে আর সরকারের বিশেষ বাহিনীর প্রোপাগাণ্ডা ছাপায়। তাদের কারণে সাধারণ মানুষ এখন সাংবাদিক নাম দেখলে সন্দেহের চোখে দেখে। এসব বিশেষ প্রতিবেদনে ‘বিশেষ সূত্র‘, ‘একটি সূত্র‘ প্রভৃতি অদ্ভূতুড়ে উৎসের বরাত দিয়ে সংবাদ (নিউজ) না করে মতামত (ভিউজ) ছাপে।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ সাংবাদিক সংবাদ ও মতামতকে গুলিয়ে ফেলেন। সংবাদে যা ঘটে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তসহ লিখতে হয়। সেখানে বিভিন্ন পক্ষের হুবহু মন্তব্য থাকে, কোনো বিশেষণ জুড়ে দেওয়া হয় না। সাংবাদিকতার নৈতিকতা নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রায় ৩৩ পৃষ্ঠার গাইডলাইন রয়েছে। বড় সংবাদ মাধ্যমগুলোয় সাংবাদিকতার ন্যূনতম মানদণ্ড ও নৈতিকতা নিয়ে সাংবাদিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। কিভাবে নিউজ-কে ভিউজ করা যাবে না তা শেখানো হয়। কিভাবে সংবাদ থেকে বিশেষণ, আরোপিত শব্দ, অননুমোদিত শব্দ ব্যবহার করা যাবে না তার পাঠ রয়েছে।
কিন্তু এই রঙ্গ দেশে সাংবাদিকতার সাথে প্লট, ফ্ল্যাট, বিদেশ ভ্রমণ, সরকারি নেতাদের অনুগ্রহ প্রার্থনা, ব্যবসায়িক সুযোগ জড়িয়ে রয়েছে। এই রঙ্গদেশের সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে যান তার কৃপা প্রার্থনা করতে, অনুগ্রহ কামনায় – কোনো অপ্রিয় প্রশ্ন করতে নয়। এখানে বহু সাংবাদিক সরকারি দল ও সরকারি বাহিনী এবং বিদেশীদের মীরজাফর হয়ে তাদের নির্দেশ মতো সংবাদ তৈরি করে থাকেন। দালাল সাংবাদিক নেতাদের আপোষকামিতার জন্যই সরকারি বাহিনীগুলো চরদখলের মতো সংবাদমাধ্যম দখলে নেয়, দালাল-অনুগত দাসদের সম্পাদক/বার্তা-সম্পাদক পদে বসিয়ে দেয়।
একজন বেশ জেষ্ঠ্য সাংবাদিক সেদিন দু:খ করে বললেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার কবর রচিত হয়েছে। এখানে এখন আর কোনো স্বাধীন সাংবাদিকতা নেই, এখানে সব ‘ফ্রেন্ডলি ফায়ার‘ – যাতে দু‘য়েকটা এদিক-ওদিক মিসফায়ার হয়। তবে এটা সত্য যে কিছু সৎ সাংবাদিকও আছেন, তবে তারা বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি। হাতে গোনা দুয়েকজন। বাংলাদেশ উদ্ধারের লড়াইটা বেশ দীর্ঘ, কঠিন। এখানে কেবল বিদ্যমান রাজনীতির উচ্ছেদই যথেষ্ট নয়, পুরো ব্যবস্থাটাকেই ভেঙেচুরে নতুন করে নির্মাণের চিন্তা করতে হবে।