নেতৃত্ব, বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্ট

১৫ আগস্ট হচ্ছে সেদিন, ৪৩ বছর আগে যেদিন একটি নবীন দেশের স্বপ্নগুলো লুট হয়ে গিয়েছিলো। বাংলাদেশ হেরে গিয়েছিলো! কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কি মৃত্যু হয়েছে? তাকে কি হারানো গেছে? তাঁর শত্রুরা সেই কবেই জেনে গেছে, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু হয়নি, বাংলার বন্ধুকে হারানো যায়নি। মানুষের জন্য কাজ করলে, ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করলে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া যায়।

বঙ্গবন্ধু সারা জীবন এই মানুষের রাজনীতিই করেছেন, মানুষকে আপন করে নিয়েছেন। মানুষও তাঁকে পরম মমতায় বুকের গভীরে স্থান করে দিয়েছে। বাংলার উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম সবকোণে বঙ্গবন্ধুকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা মানুষজন উনার প্রয়াণে নিরবে কেঁদেছে। এই মানুষগুলোই বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিও টিকিয়ে রেখেছে। আজকে যারা বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করেন, পাড়ায়-মহল্লায় উনার ভাষণ বাজিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রেমী সাজছেন, উনার ছবির পাশে নিজেদের ছবির পোস্টারে-পোস্টারে ঢেকে দিচ্ছেন শহরের অলি-গলি, রাজপথ, সড়কবাতির খুঁটি – তাঁরা যেন দয়া করে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিটুকু নেন, বঙ্গবন্ধুকে ’ব্যবহার’ করে রাজনীতি না করেন।

যারা নিজেরা অনেক নিচে নেমেছেন, নেমেই যাচ্ছেন, অন্তত বঙ্গবন্ধুর দিকে তাকিয়ে উনার রাজনীতিকে রক্ষা করা আপনাদের দায়িত্ব। বাঙালির দীর্ঘ স্বাধিকারের লড়াইয়ে বঙ্গবন্ধু কোনোদিন ক্ষমতার রাজনীতি করেন নি, মানুষের রাজনীতি করেছেন। আজকে যারা ক্ষমতাকেই রাজনীতি মনে করছেন, তারা বঙ্গবন্ধুকে পাঠে ভুল করেছেন, করছেন।

রাজনীতির দীর্ঘ পথপরিক্রমায় ক্ষমতা একটা স্টপওভার বা যাত্রাবিরতি মাত্র, কোনোভাবেই গন্তব্য নয়। ক্ষমতার বাইরের রাজনীতিই মানুষের অধিকারের রাজনীতি। একজন রাজনীতিকের আদর্শ লড়াই মানুষের স্বার্থের লড়াই, মানুষের স্বার্থ রক্ষার লড়াই। সেজন্য ক্ষমতার বাইরের রাজনীতিকে প্রকৃত রাজনীতিকরা সাদরে গ্রহণ করেন।

আজ থেকে ৬১ বছর আগে, ১৯৫৭ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ গ্রহণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু নিজেই সে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। আজকে যারা ক্ষমতা ছাড়া বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করেন না, করতে পারেন না, করতে পারবেন না – তারা বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির বোঝা। আপনাদের কারণে কিংবা আপনাদের হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ক্ষতি হলে বঙ্গবন্ধু আপনাদের ক্ষমা করবেন না, ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান